E-Haq is the founder of BanglaTeach. He is expertise on Education, Health, Financial, Banking,...
খতমে তাসমিয়া পড়ার নিয়ম এবং ফজিলত সম্পর্কে জানার পূর্বে এর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু ধারণা নেওয়া প্রত্যেক পাঠকের উচিত। তাসমিয়া শব্দের অর্থ কি? তাসমিয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে কোনো কিছুর নাম করণ করা। এখন আমরা মুসলিমরা সাধারণত প্রতি কাজের শুরুতে মহান আল্লাহ তা’আলার নাম নিয়ে শুরু করি। অর্থাৎ প্রতিটি কাজের শুরুতে আমরা “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বাক্যটি পড়ে থাকি। যার বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম” ঠিক একই ভাবে মহান আল্লাহর নাম নেওয়া তথা বিসমিল্লাহ বলার ক্ষেত্রেও তাসমিয়া শব্দটি উচ্চারণ হয়। মূলত এই উপায়েই তাসমিয়া শব্দটি দ্ধারা “বিসমিল্লাহ” এর খতমকে বোঝানো হয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, খতমে তাসমিয়া কাকে বলে? এক সাথে অজু করে একাধিক মুমিন বসে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” তাসবীহ টি একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করাকেই খতমে তাসমিয়া বলা হয়।
আলোচনার প্রেক্ষিতে এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, খতমে তাসমিয়া পড়ার যথাপোযুক্ত ফজিলত কি? অর্থাৎ উক্ত আমল কেন একজন ব্যক্তি করবে? অথবা এর থেকে কিভাবে উপকৃত হতে পারবে? এই সকল ডিটেইলস নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন ধীরে ধীরে জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুন:
বিশেষ দ্রষ্টব্য: খতমে তাসমিয়া নিয়ে আলেমদের মধ্যে নানা রকম বিতর্কতা রয়েছে। আর্টিকেলের শেষ অংশে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাই আপনারা উক্ত আমল করার পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আলেমের নিকট গিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
খতমে তাসমিয়া পড়ার সঠিক নিয়ম
উপরে আমরা খতমে তাসমিয়া সম্পর্কে মোটামোটি সম্মুখ একটি ধারণা পেয়েছি। এবার চলুন আলোচনা ও পাঠকদের সুবিধার্থে কিভাবে সঠিক উপায়ে খতমে তাসমিয়া পড়বে, সে সম্পর্কে জানা যাক। নিম্নে কিছু পয়েন্টের মাধ্যমে নিয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
খতমে তাসমিয়া পড়ার নিয়ম হলো-
- প্রথমে ওজু করে এক সাথে একাধিক ফরহেজগার মুমিন একই বিচানায় বসবে।
- এরপর ওজু থাকা অবস্থায় সকলে একত্রে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” তাসবিহ টি পড়া শুরু করবে।
- সর্বমোট ১ লক্ষ্য ২৫ হাজার বার পাঠ করবে।
- এই ক্ষেত্রে গণনার সুবিধার্থে সকলকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা ভাগ করে দিলে আরো সহজ হয়ে যায়।
- খতম শেষ করে সকলে একত্রিত হয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া পাঠ করবে।
উপরোক্ত নিয়ম মান্য করেই খতমে তাসমিয়া পড়তে হয়, আর এটিই হলো খতমে তাসমিয়া পড়ার সঠিক নিয়ম। আশা করি এখন আপনাদের মাঝে খতমে তাসমিয়া পড়ার নিয়ম সম্পর্কে মোটামোটি একটি ধারণা তৈরি হয়েছে। এবার চলুন আর্টিকেলের পরের ধাপে চলে যাই। অর্থাৎ খতমে তাসমিয়ার বহুমুখী ফজিলত সম্পর্কে জানা যাক।
খতমে তাসমিয়া পড়ার ফজিলত
উক্ত আমল করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। তারই প্রেক্ষিতে এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো খতমে তাসমিয়া পড়ার ফজিলত সমূহ সম্পর্কে। যাইহোক, আলোচনা বিলম্ব না করে চলুন জেনে নেওেয়া যাক খতমে তাসমিয়া পড়ার ফজিলত সম্পর্কে।
খতমে তাসমিয়া পড়ার ফজিলত সমূহ হলো-
- মুমিনগণের মনের সকল মনো-ভাসনা পূর্ণ করেন।
- কঠিন বিপদ-আপদ হতে আল্লাহ তা’আলা মুক্তি দান করেন।
- টাকা-পয়সা, অভাব-অনাটন দূর করে সহ ইত্যাদি রকম ফজিলত রয়েছে খতমে তাসমিয়ার।
আলোচনার সুবিধার্থে এখানে শুধুমাত্র কয়েকটি ফজিলত তুলে ধরা হয়েছে। বস্তুত অনেকে এর বহুমুখী ফজিলত সম্পর্কে বিশ্বাসী। যাইহোক, নানা রকম সোর্স খুঁজে উপরোক্ত ফজিলত সমূহগুলোই আমরা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি এখন আপনারা খতমে তাসমিয়া সম্পর্কে মোটামোটি হলেও জ্ঞাত।
খতমে তাসমিয়া নিয়ে বিতর্ক
সত্যিকার অর্থে আমাদের যেকোনো কাজ আল্লাহর নামে শুরু করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অন্যতম দিক। ‘‘পড় তোমার রাবব্ এর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’’[2] বলে ওহির সুচনাতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের সকল ক্ষেত্রে এবং কাজে এই শিক্ষার ( বিসমিল্লাহ ) বাস্তবায়ন করেছেন। ‘বিসমিল্লাহ’ ব্যবহারের মাধ্যমে এর বাস্তব প্রয়োগের সাথে সাথে সাহাবায়ে কেরামদেরকেও এর নির্দেশ দিয়েছেন। আবার নবীর সাহাবায়ে কেরামগণও তাদের সার্বিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে এই শিক্ষার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। এছাড়া ‘বিসমিল্লাহ’ বলে রোগের ঝাড় ফুঁকের আমলও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পাওয়া যায়। একদা, সাহাবী উসমান ইবন আবিল ‘আস আস-সাক্বাফী একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর শরীরের একটি ব্যথার অভিযোগ করলেন। ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই তিনি তাঁর শরীরে এই ব্যথা অনুভব করছেন বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরয করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:
« ضع يدك على الذى تألم من جسدك وقل باسم الله. ثلاثا. وقل سبع مرات أعوذ بالله وقدرته من شر ما أجد وأحاذر ». ( صحيح مسلم، باب استحباب وضع يده على موضع الألم مع الدعاء، رقم:5867)
‘‘তোমার শরীরের যে জায়গায় ব্যথা রয়েছে সেখানে হাত রাখ এবং তিনবার ‘بِاسْمِ اللَّه’ বল। আরো সাতবার বল:
‘‘أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ’’ (আমি যে ব্যথা অনুভব করছি এবং যে ভয় পাচ্ছি তা থেকে আল্লাহ ও তার কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’’[3] এই হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে ‘বিসমিল্লাহ’ এর শিক্ষা। ঠিক একই ভাবে সাহাবা, খাইরুল ক্বুরুন সবার জীবনেও এই একই শিক্ষা দেখতে পাবেন। এর বাইরে খতম নামে যা কিছু বলা হয়ে থাকে তা সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভিত্তিহীন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবিদের জীবনে এই তাসমিয়া খতমের কোনো দৃষ্টান্ত নেই, কল্যাণের সাক্ষ্যপ্রাপ্ত কোনো যুগেই এর কোনো নজীর নেই। এ সবকিছু তাদের যুগের অনেক পরের উদ্ভাবন। এছাড়া এই খতমের ফযিলতে যা কিছু বলা হয় সবই মনগড়া বানানো। আল্লাহ আমাদেরকে এ সমস্ত মনগড়া কর্ম থেকে রক্ষা করুন। ‘বিসমিল্লাহ’ এর মৌলিক শিক্ষায় আমাদের জীবন গড়ার তওফিক দান করুন। আমীন।
তাই যখনই আপনারা এরকম আমল করতে দেখবেন বা করতে যাবেন, তখন দয়া করে একজন ভালো ও অভিজ্ঞ আলেমের সন্নিকটে গিয়ে আমলটি সম্পর্কে বিস্তারিত নিশ্চিত হয়ে নিবেন। অন্যথায় ফজিলত পাওয়ার বদলতে গুণাহ হওয়ার সম্ভাবণা বৃদ্ধি পায়।
খতমে তাসমিয়া পড়ার নিয়ম নিয়ে শেষ কথা
খতমে তাসমিয়া পড়ার নিয়ম ও ফজিলত উভয় সম্পর্কেই ইতিমধ্যে আমরা বিস্তারিত জেনেছি। এবং সর্বপরি এই তাসবিহ নিয়ে চলমান থাকা নানা রকম বিতর্ক সহ আনুসাঙ্গিক সকল কিছু সম্পর্কেই বিস্তারিত জেনেছি। তাই আশা করি আপনি বা আপনারা যখন কোনো একটি আমল করতে যাবেন, তখন আপনি যদি উক্ত আমল সম্পর্কে সিউর না হোন, তাহলে দয়া করে একজন আলেম বা দ্ধীনি ভাইয়ের নিকট গিয়ে বিস্তারিত জেনে নিবেন। অন্যথায় বিদাত করার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে।
সর্বপরি, আশা করি আজকের আর্টিকেল তথা খতমে তাসমিয়া পড়ার নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে উপকৃত হতে পেরেছেন।
খতমে তাসমিয়া পড়ার নিয়ম সম্পর্কে আরো জানতে
E-Haq is the founder of BanglaTeach. He is expertise on Education, Health, Financial, Banking, Religious and so on.