পাথরকুচি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাবার নিয়ম

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা
BanglaTeach
E-Haq
Digital Marketer at- BanglaTeach

E-Haq is the founder of BanglaTeach. He is expertise on Education, Health, Financial, Banking,...

Sharing is caring!

রোগ প্রতিরোধে পাথরকুচি অতুলনীয়। পুরনো সর্দিতে এই পাতার রস গরম করে খেলে উপকার হয়। ছোট বড় সবার মূত্র রোধে পাতার রস খাওয়ানো হয়। খাওয়ার মাত্রা বড়দের বেশি। মূত্রনালির যে কোন সংক্রমণে, রক্তপিত্তে, পেট ফাঁপায়, শিশুদের পেট ব্যথায়, মৃগী রোগীদের পাথরকুচির রস খাওয়ানো হয়। মূত্র পাথর সারিয়ে দিতে সক্ষম পাথরকুচি। এ ছাড়া ব্রণ, ক্ষত ও মাংসপেশী থেঁতলে গেলে, বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে এই পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

প্রাচীনকাল হতেই ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিতে পাথরকুচি পাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। হাজার রোগের মহা ঔষধ বলা হয় এই পাথরকুচি কে। অনেকে ইন্টারনেটে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা কি তা জানতে চেয়ে থাকে। তাই আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে এর উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা ও এটি কিভাবে খেতে হয় তার নিয়ম আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা

এটি এমন একটি মহা ঔষধ চার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আদিম যুগ হতেই বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় এই পাতাটি ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় সকল রোগের ক্ষেত্রেই এই পাতার রস খেলে উপশম পাওয়া যায়। অনেকে ইন্টারনেটে ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য পাথরকুচি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাই। তাই এখন আমি আপনাদের সাথে পাথরকুচি পাতার ২০ টি উপকারের কথা শেয়ার করব।

  • সর্দি :যে সর্দি পুরনো হয়ে গেছে সে ক্ষেত্রে এটি বিশেষ উপযোগী। কফ বিকারে পাথরকুচি পাতা রস করে সেটা একটু গরম করতে হবে এবং গরম অবস্থায় তার সঙ্গে একটু সোহাগার খৈ মেশাতে হবে। ৩ চা চামচের সঙ্গে ২৫০ মিলিগ্রাম যেন হয়। তা থেকে ২ চা চামচ নিয়ে সকাল-বিকেলে দু’বার খেতে হবে। এর দ্বারা পুরনো সর্দি সেরে যাবে ও সর্বদা কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
  • বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে এ পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
  • জন্ডিস নিরাময় :লিভারের যে কোনো সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে তাজা পাথরকুচি পাতা ও এর রস অনেক উপকারী।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও মূত্রথলির সমস্যা থেকে পাথরকুচি পাতা মুক্তি দেয়।
  • কাটা বা থেঁতলে যাওয়া :টাটকা পাতা পরিমাণমতো হালকা তাপে গরম করে কাটা বা থেঁতলে যাওয়া স্থানে সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।
  • রক্তপিত্ত :পিত্তজনিত ব্যথায় রক্তক্ষরণ হলে দু’বেলা এক চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস দু’দিন খেলে সেরে যাবে।
  • পেট ফাঁপা : পেট ফুলে যাওয়া, প্রস্রাব আটকে থাকা, আধোবায়ু, সরছে না, সে ক্ষেত্রে একটু চিনির সঙ্গে এক বা দুই চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস গরম করে সিকি কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা মূত্র সরল হবে, আধোবায়ুরও নিঃসরণ হবে, ফাঁপাটাও কমে যাবে।
  • শিশুদের পেটব্যথা :শিশুর পেটব্যথা হলে ৩০-৬০ ফোঁটা পাথরকুচি পাতার রস পেটে মালিশ করলে ব্যথার উপশম হয়। তবে পেটব্যথা নিশ্চিত হতে হবে।
  • মৃগী রোগী :রোগাক্রান্ত সময়ে পাথরকুচি পাতার রস ২-১০ ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে। একটু পেটে গেলেই রোগের উপশম হবে।
  • শরীর জ্বালাপোড়া :দু’চামচ পাথরকুচি পাতার রস আধা কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দু’বেলা সেবনে শরীরের জ্বালাপোড়া দূর হয়।
  • কিডনির পাথর অপসারণ :পাথরকুচি পাতা কিডনি ও গলগণ্ডের পাথর অপসারণ করতে সাহায্য করে। দিনে দু’বার ২ থেকে ৩টি পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খেতে হবে।
  • পাইলস রোগের চিকিৎসায়ঃ পাথরকুচি পাতার রস এবং গোল মরিচ একসাথে মিশিয়ে পান করলে পাইলস ও অর্শ্ব রোগের উপশম হয়।
  • মেহ :সর্দিজনিত কারণে শরীরের নানা স্থানে ফোঁড়া দেখা দেয়। সে কারণে ব্যথা হয়, যাকে মেহ বলে। এ ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস এক চামচ করে সকাল-বিকেল এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • পাথরকুচি পাতার রসের সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • কলেরা, ডায়রিয়া বা রক্ত আমাশয় রোগ সারাতে পাথরকুচি পাতার জুড়ি নেই। ৩ মি.লি. পাথরকুচি পাতার জুসের সঙ্গে ৩ গ্রাম জিরা ও ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে কয়েক দিন পর্যন্ত খেলে এসব রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।
  • মাথা ব্যাথা দূর করে।
  • ত্বকের যত্ন :পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। সঙ্গে সঙ্গে এর মধ্যে জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা থাকে। যারা ত্বক সম্পর্কে অনেক সচেতন তারা পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। ব্রণ ও ফুসকুড়ি জাতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে

পাথরকুচি পাতার অপকারিতা

সকল ওষুধের কাছে যে শুধুমাত্র উপকার হয়ে থাকে তা নয়। সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে উপকারের চেয়ে উপকারিতা বেশি হতে পারে। ঠিক তেমনি পাথরকুচি পাতার কিছু অপকারিতা রয়েছে। যারা নিয়মিত পাথরকুচি পাতা খেয়ে থাকেন তাদেরকে অবশ্যই পাথরকুচি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। নিচের অংশ থেকে এই পাতার উপকারিতা গুলো দেখে নিন।

উপকারিতার পাশাপাশি পাথরকুচির কিছু অপকারিতা রয়েছে –

১) অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার ফলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

২) পাথরকুচির রস মাত্রারিক্ত সেবনের ফলে পেটের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন – কলেরা, ডায়রিয়া।

৩) পিত্তথলিতে সমস্যা হতে পারে।

৪) ক্ষুধামন্দা সৃষ্টি হতে পারে।

পাথরকুচি পাতা খাবার নিয়ম

যেকোনো ধরনের ঔষধি গাছ সেবন করার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি নিয়ম মেনে পাথরকুচি পাতার রস সেবন করতে পারেন তাহলে অনেক রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি সঠিক নিয়মে এই রস না পান করেন তাহলে আপনার শরীরে বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই সেবন করার পূর্বে অবশ্যই পাথরকুচি পাতা খাবার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

১) পাথরকুচির পাতা বেটে পেস্ট করে খেতে পারে। এতে করে শরীরের জালাপোড়া অনেকাংশে কমে আসবে।

২) পাথরকুচি পাতা বেটে এর রস খেতে পারেন। প্রয়োজন অনুযায়ী পাতার রসের সাথে গোলমরিচ, মধুসহ অন্যান্য উপাদান মেশাতে পারেন। কিডনির সমস্যা সমাধানের জন্য পাথরকুচির রস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।

৩) সরাসরি পাথরকুচির পাতা চিবিয়েও খেতে পারেন।

৪) সর্দি জনিত সমস্যায় আপনি নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস বেটে তার সাথে মধু নিয়ে নিয়মিত খেলে বেশ উপকার পাবেন।

পাথরকুচি পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সকল প্রকার ওষুধে গাছগুলোর মধ্যে পাথরকুচি গাছ অন্যতম। বহুল রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু পাথরকুচি পাতার বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই আপনি যদি পাথরকুচি পাতার রস সেবন করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার শারীরিক কিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হতে পারে। তবে এতে ভয়ের কোন কারণ নেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনি এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

  • অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খেলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খেলে পেটের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খেলে পিত্তথলির সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খেলে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খেলে কলেরা কিংবা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শেষ কথা

আমাদের চারিপাশে অনেক ছোট ছোট ওষুধ গাছ রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যগত অনেক উন্নতি করে থাকে। আজকের এই পোস্টে আমি আপনার সাথে পাথরকুচি পাতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টের মাধ্যমে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অপকারিতা ও এটি কিভাবে খেতে হয় তার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আজকের সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

BanglaTeach
E-HaqDigital Marketer at- BanglaTeach

E-Haq is the founder of BanglaTeach. He is expertise on Education, Health, Financial, Banking, Religious and so on.

About E-Haq

E-Haq is the founder of BanglaTeach. He is expertise on Education, Health, Financial, Banking, Religious and so on.

View all posts by E-Haq →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *