এই পোস্টে একুশের গান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া আছে। এই ধরনের সৃজনশীল পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই প্রশ্ন গুলো মূল বইয়ে দেওয়া নেই। গাইড বই থেকে অনুশীলন করতে হবে। অনেকের কাছে গাইড নেই, তারা এই পোস্ট থেকে সৃজনশীল গুলো পড়ে নিবেন। নিচে বিভিন্ন বোর্ডের একুশের গান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে।
একুশের গান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
সৃজনশীল ১ঃ
শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
এবার লোকের ঘরে ঘরে যাবে
সোনালী নয়কো, রক্ত রঙিন ধান
দেখবে সকলে সেখানে জ্বলছে
দাউ দাউ করে বাংলাদেশের প্রাণ।
ক. একুশের গান কবিতাটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
খ. কবি কেন একুশে ফেব্রুয়ারিকে জেগে উঠতে আহ্বান করেছেন?
গ. উদ্দীপক ও একুশের গান কবিতার মধ্যে যে দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ.উদ্দীপকে একুশের গান কবিতার বিষয়বস্তুর আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল ২ঃ
ওরা কেড়ে নিতে চায় বুকের স্বপ্ন, মায়ের মুখের ভাষা,
ঝরিয়ে রক্ত, ভাইয়ের প্রাণ, হৃদয়ের ভালোবাসা।
জেগে উঠো আজ সাহসী যৌবন, আনো নব উত্থান,
দ্রোহের আগুনে পোড়াও ওদের, গাও বিজয়ের গান।
ক. একুশের গান কবিতার পটভূমি কী?
খ. “দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়- বলতে কী বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপক ও একুশের গান কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ.“উদ্দীপক ও একুশের গান কবিতার মূলসুর একই।”- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
একুশের গান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উত্তর ১ঃ
ক. একুশের গান কবিতাটি ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয়।
খ. এদেশে এখনো যে অন্যায় ও বৈষম্য বিরাজ করছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে কবি পুনরায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানি শাসনামলে অন্যায়ভাবে মানুষের অধিকার হরণ করার বিরুদ্ধে এদেশের জনগণ বিভিন্ন সময়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তারই উলেস্নখযোগ্য ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন। কিন্তু এ অন্যায়, অত্যাচার আজও চলছে বলে কবি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আবার জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
গ.
উদ্দীপক ও একুশের গান কবিতার মধ্যে প্রতিবাদী মানসিকতার সাদৃশ্য রয়েছে।
একুশের গান কবিতায় বাংলার দামাল ছেলেদের প্রতিবাদী চেতনার দিকটি ফুটে উঠেছে। শাসকের কঠিন বিধি-নিষেধের বেড়াজাল ডিঙিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য ভাষা শহিদরা প্রাণ উৎসর্গ করেছে বলে রক্তরাঙা এদিনটিকে বাঙালি কখনো ভুলতে পারে না। একুশের শহিদের আত্মার ডাকে জেগে ওঠে আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন। সন্তানহারা মায়ের চোখের জল মানুষের প্রাণে প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠেছিল আপামর বাঙালি ফাল্গুনের সেই রক্তিম দিনে।
উদ্দীপকেও সমানভাবে বাঙালির প্রতিবাদী মানস ও চেতনার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। কবি বাংলাদেশকে বাহবা দিয়েছেন, কারণ বাংলাদেশকে শাসকরূপী শত্রম্নরা নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বারবার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তারপরও বাংলা, বাঙালি মাথা নোয়ায়নি, যা পৃথিবীর মানুষের কাছে বিস্ময়কর। তিনি মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ক্রোধকে জাগিয়ে তুলে শক্তিতে পরিণত করতে চান। উদ্দীপকে কবি এতই প্রবলভাবে জেগে উঠেছেন তিনি সামান্যতম ছাড়ও দিতে রাজি নন। তার ভাষায় দাবি না মানলে সকলেই রক্ত দিতে প্রস্তুত। তাই বলা যায়, প্রতিবাদী মানসিকতার দিক থেকে উদ্দীপক এবং একুশের গান কবিতার সাদৃশ্য বর্তমান।
ঘ.
উদ্দীপকে একুশের গান কবিতার বিষয়বস্তুর আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে- উক্তিটি যথার্থ।
একুশের গান কবিতায় ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে বাঙালির আত¥ত্যাগ ও গণজাগরণের কাহিনী চিত্রায়িত করেছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা না দেবার চক্রান্তে গর্জে ওঠে আপামর জনতা। কবির ভাষায় বিষাক্ত নাগিনী, আঁধারের পশুসম সেই সব শাসকরা যারা সন্তানের মুখ থেকে মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা ক্ষোভের আগুন জ্বেলে সে চক্রান্তকে প্রতিহত করে।
আলোচ্য উদ্দীপকে শোষিত মানুষের জেগে ওঠার গল্প বলেছেন কবি। দেশের মানুষকে তিনি বাহবা জানিয়েছেন। কারণ এসব মানুষেরা বহুদিন আগে থেকেই অত্যাচারে জর্জরিত। অত্যাচারের আগুনে শাসকগোষ্ঠী এদেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিলেও তারা বর্তমান। তাদের এই সহ্য ক্ষমতা দেখে পৃথিবীও অবাক। এসব মানুষ জ্বলে পুড়ে গেলেও তারা মাথা নোয়ায় না। তারা কষ্ট সহ্য করলেও আত¥সম্মানের সাথে আপস করে না। কবি বলেছেন, এসব নিপীড়িত মানুষ আজ জেগে উঠবে। মানুষের ঘরে ঘরে বাজে প্রতিবাদীর বুকের রক্তে রঙিন ধান। এতেই প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার পড়্গে কতখানি প্রাণচঞ্চল।
উত্তর ২ঃ
ক. একুশের গান কবিতার পটভূমি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।
খ. দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়- বলতে পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠী কর্তৃক এদেশের ধনসম্পদ লুণ্ঠন, অন্যায়-অত্যাচারকে রূপক হিসেবে উক্তিটি করা হয়েছে।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তান সবসময় দমন-নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এদেশের ধনসম্পদ, অন্ন বস্ত্র প্রভৃতি কেড়ে নিয়ে পাকিস্তানিরা এদেশের মানুষের অধিকার হরণ করেছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে আমাদের নিজস্ব সম্পদকে দেশের ভাগ্য বলেছেন কবি। আর এ ভাগ্যকেই জোরপূর্বক পাকিস্তানিরা বিক্রি করে নিজেদের উন্নতি করেছে।
গ.
উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমা শোষকগোষ্ঠীর অন্যায়-নির্যাতন এবং তাদের বিরুদ্ধে বাঙালির অপ্রতিরোধ্য সংগ্রামী মনোভাবের দিক, যা একুশের গান কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
একুশের গান কবিতাটি ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত। ভাষার দাবিতে হানাদার শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ সর্বস্ব দিয়ে যেভাবে রুখে দাঁড়িয়ে অধিকার আদায় করেছে তার বর্ণনা রয়েছে এ কবিতায়। মায়ের ভাষার মান বাঁচাতে নিজের জীবন তুচ্ছ করে তাঁরা রাস্তায় নামে এবং মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে তারা শহিদ হয়। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার জনতাকে আবার একুশের চেতনায় জাগ্রত হওয়ার আহ্বান কবি করেছেন।
উদ্দীপকেও পাকিস্তানি শোষকদের অন্যায়-আচরণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যার ফলে অকালে ঝরে পড়েছিল হাজারো ভাইয়ের প্রাণ, হৃদয়ের ভালোবাসা। তাই উদ্দীপকের কবি বাংলার দামাল ছেলেদের নব উদ্যমে দ্রোহের আগুনে পশুদের পুড়িয়ে বিজয়ের গান গেয়ে উঠতে বলেছেন। সুতরাং বলা যায়, বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জাগ্রত শক্তির চিিত্রত প্রতিরূপ হিসেবে কবিতার ভাববস্তুর সাথে উদ্দীপকে সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ.
উদ্দীপক ও একুশের গান কবিতার মূলসুর একই-উক্তিটি যথার্থ।
একুশের গান আপাত একটি গান হলেও মূলত এর কবিতার পটভূমি হলো বাঙালি জাতির অস্তিত্বের প্রথম সোপান। নরপশুরা আমাদের বাংলা মায়ের ভাষাকে বুলেটের আঘাতে কেড়ে নিতে চেয়েছিল, ওইসব ঘৃণ্য নরপশুদের জ্বালিয়ে মারার জন্যে প্রতি মুহূর্তে ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রেরণা। আজো জালিমের কারাগারে বন্দি আছে বাংলার বীর নর-নারী। এসব শত্রম্নদের ধ্বংস করতে প্রয়োজন একুশের চেতনার পুনর্জাগরণ। তাই শহিদদের আত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে একুশের চেতনা বুকে ধারণ করে কবি বাংলার জনতাকে জেগে ওঠার আহ্বান করেছেন।
উদ্দীপকেও পাকিস্তানি নরঘাতক পিশাচদের অত্যাচারের পাশাপাশি বাংলার মানুষের প্রতিবাদের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর মনুষ্যত্বহীন শাসকরা বাঙালির বুকের রক্ত ঝরিয়ে মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে বাংলার সাহসী যুবকদের দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলেছেন। ভাষার দাবিতে বাঙালির আন্দোলন এবং আন্দোলনে শোষকগোষ্ঠীর পাশবিক হামলা, হামলার বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিরোধ গড়ে তোলার দিকটি উদ্দীপক ও কবিতায় একই আবেগে উচ্চারিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও একুশের গান কবিতার মূলসুর একই।
শেষ কথা
আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভালোলেগছে এবং এই পোস্ট থেকে একুশের গান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম শিক্ষামূলক আরও পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকুন। অষ্টম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের অনেক পোস্ট এই ওয়েবসাইটে শেয়ার করা হয়েছে। পোস্ট টি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আরও দেখুনঃ
একুশের গান কবিতা – আবদুল গাফফার চৌধুরী। ৮ম শ্রেণি
প্রার্থী কবিতা- সুকান্ত ভট্টাচার্য। অষ্টম শ্রেণি বাংলা ১ম পত্র