এই পোস্টে বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন শেয়ার করা হয়েছে। বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতাটি কালিদাস রায়ের পর্ণপুট’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।এ কবিতায় মুঘল সম্রাট বাবুরের মহানুভবতা বর্ণিত হয়েছে। এতে তার মহৎ আদর্শ ও মানবিক মূল্যবােধকে তুলে ধরা হয়েছে। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবুর। রাজ্য বিজয়ের পর তিনি প্রজাসাধারণের হৃদয় জয়ে মনােযােগী হলেন। নিচে থেকে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করুন।
বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল
এই অংশে বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর শেয়ার করা হয়েছে। এই ধরনের প্রশ্ন বিভিন্ন পরীক্ষায় দেওয়া থাকে। মূল বইয়ে সৃজনশীল গুলো দেওয়া নেই। এজন্য এই পোস্টে দেওয়া প্রশ্ন গুলো পড়ে নিবেন।
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ঃ
বাচিতে চাই না আর জীবন আমার সঁপিলাম,
পীর, পুত পদে আপনার।
ইব্রাহিমের গুপ্তঘাতক আমি ছাড়া কেউ নয়,
ঐ অসিখানা এ বুকে হানুন সত্যের, হােক জয়।
ক. বাবুর-এর আসল নাম কী?
খ. সঁপিনু জীবন, করুণ এখন দণ্ডবিধান মাের।’- উক্তিটি কার, কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ইব্রাহিমের গুপ্তঘাতকের সাথে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত রাজপুত বীরের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপকটি বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশে কতটুকু সক্ষম তা যুক্তি সহকারে বুঝিয়ে বল।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ঃ
সৎভাই রাকিবকে কখনােই আপন ভাবতে পারেনি আনিস। পিতা মারা গেলে সে রাকিবকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করে। একদিন আনিস পিতার নামে জাল ‘উইল বানাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশের হাতে আটক ভাইকে সব জেনে-শুনেই রাকিব ছাড়িয়ে আনে এবং সব সম্পত্তি আনিসকে লিখে দেয়। আনিস রাকিবের এ আচরণে বিস্মিত হয় এবং তার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে।
ক. কোন যুদ্ধে সংগ্রাম সিং-এর পতন হয়?
খ. ‘মাটির দখলই খাটি জয় নয়’- চরণটি বুঝিয়ে লেখাে।
গ. উদ্দীপকের আনিস চরিত্রটি বাবুরের মহত্ব’ কবিতার কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপকের রাকিবকে বাবুর চরিত্রের সার্থক প্রতিনিধি বলা যায় কি? তােমার মতের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করাে।
বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
উপরের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অনেকের জানা নেই। তারা এখান থেকে উত্তর গুলো পড়ে নিবেন। এই অংশে বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হয়েছে।
উত্তর ১ঃ
ক। বাবুর-এর আসল নাম জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ।
খ। সম্রাট বাবুরের মহত্ত্বের পরিচয় পেয়ে রণবীর চৌহান তার কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রশ্নোত উক্তিটি করেন।
রণবীর চৌহান নিজ জাতির পরাজয়ের প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য বাবুরকে হত্যা করতে চান। এজন্য তিনি দিল্লির পথে পথে বাবুরের সন্ধান করতে থাকেন। এ সময় তিনি দেখতে পান, পর্যটকবেশী বাবুর নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে রাজপথে পড়ে থাকা একটি মেথর শিশুকে উদ্ধার করেন। রাজপুত যুবক রণবীর চৌহান বাবুরের এই মহত্ত্বে বিস্মিত হন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং প্রশ্নোত্ত উক্তিটি দ্বারা নিজের অপরাধের শাস্তি পেতে চান।
গ।
উদ্দীপকে বর্ণিত গুপ্তঘাতক ও বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত দুজনেই মহৎ ব্যক্তিত্বের কাছে নিজেদের জীবন সঁপে দিয়েছেন রাজপুত বীর।
‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত সম্রাট বাবুরের উত্থানকে কোনাে ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না রাজপুতগণ। রাজপুত বীর তরুণ রণবীর চৌহান বাবুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে দিল্লীর রাজপথে ঘুরছিলেন। কিন্তু বাবুরের মহানুভবতার পরিচয় তার মনের পরিবর্তন ঘটায়। বাদশাহ বাবুরের কাছে পরিচয় প্রকাশ করে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।
উদ্দীপকে বর্ণিত গুপ্তঘাতক নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। মহৎ ব্যক্তির কাছে নিজের জীবন সমর্পণ করেছে। বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় বর্ণিত গুপ্তঘাতক একইভাবে নতি স্বীকার করে বাদশাহ বাবুরের কাছে। সুতরাং, এদিক থেকে চরিত্র দুটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ।
উদ্দীপকটি বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার আংশিক ভাবের ধারক।
কালিদাস রায় বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বাদশাহ বাবুরের মহানুভবতার কথা তুলে ধরেছেন। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবুর। রাজ্য বিজয়ের পর সাধারণ জনগণের হৃদয় জয়ের প্রতি মনােযােগী হন তিনি। কিন্তু প্রতিশােধপরায়ণ রাজপুতগণ তাঁকে শাসক হিসেবে মেনে নিল না। রাজপুত বীর রণবীর চৌহান বাবুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে দিল্লীতে আসেন। এ সময় এক মেথর শিশুকে বাঁচাতে বাদশাহ বাবুরের জীবন বাজি রাখার দৃশ্য দেখে বিস্মিত হন তিনি। বাবুরের পায়ে পড়ে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেন।
উদ্দীপকে এক গুপ্তঘাতকের আত্মসমর্পণের কথা বলা হয়েছে। নিজের অপরাধ স্বীকার করে সে সত্যের জয় নিশ্চিত করতে বলেছে। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার বর্ণনার সাথে এ দিকটিই কেবল মিলে যায়। কিন্তু কবিতার মতাে বিস্তৃত পটভূমি উদ্দীপকে অনুপস্থিত। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় সম্রাট বাবুরের মহানুভবতার পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক পটভূমি তুলে ধরা হয়েছে। বাদশাহ বাবুরের রাজ্য জয়ের পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি দিল্লীর রাজপথে ছদ্মবেশে বের হন। আবার রণবীর চৌহান ও বাবুরের মধ্যকার বিরােধ এবং মানবিক অনুভূতির জাগরণের পেছনেও রয়েছে একই পরিপ্রেক্ষিত। সেই সাথে বাবুরের আদর্শ ও মানবপ্রেমের অনন্য বৈশিষ্ট্যের প্রমাণও কবিতায় বিদ্যমান। কিন্তু উদ্দীপকের কবিতাংশে এমন কোনাে বিষয়ের উল্লেখ নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সমগ্রভাব প্রকাশ পায়নি।
উত্তর ২ঃ
ক। খানুয়ার যুদ্ধে সংগ্রাম সিং-এর পতন হয় ।
খ। রাজ্য দখলের পাশাপাশি রাজ্যের জনগণের হৃদয় জয় করার ভেতরই রাজার ক্ষমতার স্থায়িত্ব নির্ভরশীল।
সম্রাট বাবুর পানিপথ প্রান্তরে পাঠান বাদশা ইব্রাহিম লােদিকে পরাজিত ও হত্যা করে দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন। তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম সিং যুদ্ধ ঘােষণা করলেন। সংগ্রাম সিংয়ের সাথে খানুয়ার প্রান্তরে বাবুরের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সেখানে সংগ্রাম সিংয়ের পতন ঘটে, গােটা ভারত বাবুরের শাসনাধীন হয়ে পড়ে। বাবুর বুঝতে পারে রাজ্য দখল তথা দেশের মাটি দখল করেই দেশের সুশাসন ও ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় না। দেশের জনগণের মন জয় করে রাজ্যশাসন করাই সমীচীন। প্রশ্নোত্ত চরণে এ কথাই বােঝানাে হয়েছে।
গ।
উদ্দীপকের আনিস চরিত্রটির মানসিক পরিবর্তনের দিকটি তাকে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার রণবীর চৌহানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে।
কালিদাস রচিত ‘বাবুরের মহত্ব’ কবিতায় যুদ্ধে পরাজিত রাজপুত রণবীর চৌহান প্রতিহিংসাবশত সম্রাট বাবুরকে হত্যা করতে চায়। কিন্তু বাবুর নিজের জীবনের মায়া না করে যখন পাগলা হাতির কবল থেকে এক মেথর শিশুকে রক্ষা করেন তখন ঘাতক রাজপুত নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং অনুতপ্ত হয়। বাবুরের মহানুভবতায় বিস্মিত হয়ে রণবীর চৌহান তার কাছে ক্ষমা চায়। মহানুভব বাবুর তাকে ক্ষমা করে দেন এবং নিজের দেহরক্ষী নিয়ােগ করেন।
উদ্দীপকের আনিস তার সৎভাই রাকিবকে ভালােবাসতে পারেনি। আর তাই ভাইকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে জাল উইল বানাতে চেষ্টা করেছে এবং পরিণতিতে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। কিন্তু যে ভাইকে সে ঠকাতে চেয়েছিল সেই রাকিবই তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছে এবং সম্পত্তি লিখে দিয়েছে। আনিস তার ভাইয়ের এমন আচরণে বিস্মত হয় এবং তার আচরণের পরিবর্তন হয়। বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায়ও সাদৃশ্যপূর্ণ একটি ঘটনার অবতারণা হয়েছে। সেখানে রণবীর চৌহান যাকে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর ছিল সেই সম্রাট বাবুরের মহত্ত দেখে তার মানসিক পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং’ উদ্দীপকের আনিস এবং ‘বাবুরের মহত্ব’ কবিতায় রণবীর চৌহানের নিজেদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের জন্য, অনুতপ্ত হওয়ার দিকটি তাদের দুজনকে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে।
ঘ।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে উদ্দীপকের রাকিবকে বাবুর চরিত্রের সার্থক প্রতিনিধি বলা যায়।
কালিদাস রায় রচিত বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় সম্রাট বাবুরের মহানুভবতা বর্ণিত হয়েছে। যুদ্ধে পরাজিত চিতােরের এক তরুণ রাজপুত রণবীর চৌহান প্রতিশােধের মােহে অন্ধ হয়ে বাবুরকে হত্যা করতে চায়। কিন্তু বাবুরের নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে মেথর শিশুকে উদ্ধার করতে দেখে সে অত্যন্ত বিস্মিত হয়। তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে । মহৎপ্রাণ বাবুর তাকে ক্ষমা করে দেন।
উদ্দীপকে বর্ণিত রাকিব চরিত্রে উঠে এসেছে মহত্ত্ব ও মানবিক মূল্যবোেধ। তার যে ভাই তাকে সকল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল সেই ডাইকেই সে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছে এবং ভাইকে সম্পত্তি লিখে দিয়েছে। তার এমন আচরণ লােভী ভাইকে বিস্মিত করেছে। আর তাই সে অনুতপ্ত হয়ে নিজের মানসিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। উদ্দীপকের রাকিব তার লােভী ভাইকে ক্ষমা ও সম্পদ দান করার মাধ্যমে যে মহত্ব দেখিয়েছে; তা ইতিহাসে বিরল।
তার মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে আনিস.তার ভুল বুঝতে পারে। ‘বাবুরের মন্ত্র’ কবিতায় সম্রাট বাবুরের ক্ষমা করার এমনি এক মহৎ ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। উদ্দীপক এবং বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতা পড়ে আমরা তাদের মহানুভবতা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি এবং তাদের মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবিক মূল্যবােধসম্পন্ন আদর্শ জীবন গড়তে পারি। সুতরাং, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে উদ্দীপকের রাকিবকে বাবুর চরিত্রের সার্থক প্রতিনিধি বলা যায়।
শেষ কথা
আশা করছি এই পষ্ট টি আপনাদের অনেক ভালোলেগছে এবং এই পোস্ট থেকে বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম শিক্ষামূলক আরও পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকুন। অষ্টম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের অনেক পোস্ট এই ওয়েবসাইটে শেয়ার করা হয়েছে। পোস্ট টি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আরও দেখুনঃ
বাবুরের মহত্ত্ব কবিতা- কালিদাস রায়। অষ্টম শ্রেণি