এই পোস্টে প্রার্থী কবিতা দেওয়া হয়েছে। এই কবিতা টি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন। সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি প্রচণ্ড শীতে জর্জরিত দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন। উদ্দীপকের রাকিবও রাস্তার পাশের শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ দেখে ব্যথিত হয়েছে। শীতের কারণে সহায়-সম্বলহীন মানুষদের অসহায়ত্তেই সমধর্মী চিত্রটি প্রকাশিত হয়েছে উদ্দীপক এবং ‘প্রার্থী’ কবিতায়। নিচে থেকে সম্পূর্ণ কবিতা পড়ুন।
প্রার্থী কবিতা
এখানে প্রার্থী কবিতা টি শেয়ার করেছি। এটি অষ্টম শ্রেণির বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানে সম্পূর্ণ কবিতা পেয়ে যাবেন। নিচের অংশ থেকে কবিতা টি পড়ুন।
প্রার্থী
– সুকান্ত ভট্টাচার্য
হে সূর্য! শীতের সূর্য!
হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়
আমরা থাকি,
যেমন প্রতীক্ষা ক’রে থাকে কৃষকদের চঞ্চল চোখ,
ধানকাটার রেমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।
হে সূর্য, তুমি তো জানো,
আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!
সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে,
এক-টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!
সকালের এক-টুকরো রোদ্দুর
এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামী।
ঘর ছেড়ে আমরা এদিক ওদিকে যাই
এক-টুকরো রোদ্দুরের তৃষ্ণায়।
হে সুর্য!
তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও,
আর উত্তাপ দিও,
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
হে সূর্য
তুমি আমাদের উত্তাপ দিও
শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড,
তোমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে
একদিন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে
পরিণত হব!
তারপর সেই উত্তাপে যখন পুড়বে আমাদের জড়তা,
তখন হয়তো গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারবো
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
আজ কিন্তু আমরা তোমার অকৃপণ উত্তাপের প্রার্থী।।
প্রার্থী কবিতার কবি পরিচিতি
সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৫ আগস্ট, ১৯২৬ – ১৩ মে, ১৯৪৭) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি। সুকান্ত ভট্টাচার্য সংগ্রামী এক যুব – মানস রূপেই আকস্মিক ভাবে বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে আবির্ভাব হয়েছিল কিশাের কবি সুকান্তের। আবার অকালে তার বিদায়ও ছিল এক আকস্মিক ঘটনা।
বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ, বিধ্বংসী মহাযুদ্ধের হাহাকার- এমনি এক বিপর্যস্ত পরিবেশের মধ্যেই গড়ে উঠেছিল সুকান্তের কবি – মানস। প্রখর সমাজনিষ্ঠার সঙ্গে স্বদেশ ও ইতিহাস চেতনায় সাম্যবাদ, মানবপ্রেম ছিল তার কাব্যের উপজীব্য। স্বদেশ ও সমাজের দুঃখ দুর্দশা, শশাষণ, লাঞ্ছনা, তার মধ্যে এক আপােসহীন সংগ্রামী মনােভাবের জন্ম দিয়েছিল। তথাকথিত কবিসুলভ আত্মকেন্দ্রিক রােম্যান্টিক কল্পনাবিলাস তাঁর কাব্যে কোথাও প্রশ্রয় পায়নি। একারণেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন জনজীবনের একান্ত আপনার সংগ্রামী কবি।
নাম | সুকান্ত ভট্টাচার্য |
জন্ম | 15th আগস্ট 1926 |
পিতা | নিবারণ ভট্টাচার্য |
মাতা | সুনীতি দেবী |
জন্মস্থান | কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি , ব্রিটিশ ভারত |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
পেশা | কবি |
মৃত্যু | 13th মে 1947 (বয়স 20) |
প্রার্থী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
দামি গাড়ি হাঁকিয়ে বারিধারা অফিসে যাবার পথে বিজয় সরণি সিগন্যালে জীর্ণ-শীর্ণ এক ভিক্ষুক নাদিম সাহেবের গাড়ির জানালার পাশে ভিক্ষার থালা বাড়িয়ে দিলে তিনি জানালার কালো গস্নাস তুলে দেন। আর ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন- রাবিশ, ভিক্ষুকে দেশটা ভরে গেছে। কথা শুনে ড্রাইভার আবদুল বলে- স্যার, গরিব মানুষ, কী করবে বলেন? এই ভিক্ষার আয় রোজগার দিয়েই তো ওরা সংসায় চালায়।
ক. প্রার্থী কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. কবি সূর্যকে জ্বলন্ত অগ্নিপি- বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণপ্রার্থী কবিতার কোন ভাবের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ- বর্ণনা কর।
ঘ.ড্রাইভার আবদুলের অভিব্যক্তিতেপ্রার্থী কবিতার মূল চেতনা প্রকাশ পেলেও কবি সুকান্তের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।
প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রার্থী কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যেরছাড়পত্র কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।
খ. সূর্যের অফুরন্ত উত্তাপের প্রখরতা বোঝাতেই কবি সূর্যকে জ্বলন্ত অগ্নিপি- বলেছেন।এ পৃথিবীর যাবতীয় শক্তির উৎস সূর্য। সূর্য যে তাপ বিকিরণ করে তার সাহায্যেই ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানুষ জীবনধারণ করে। বিশেষ করে শীতকালে অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের প্রধান সহায় এ সূর্যের উত্তাপ। তাই তিনি সূর্যের তেজের প্রখরতা বোঝাতে একে জ্বলন্ত অগ্নিপি- বলেছেন।
গ.
উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণপ্রার্থী কবিতায় প্রকাশিত সমাজের অসহায় মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
প্রার্থী কবিতায় অন্ন-বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষের প্রতি কবির অসীম মমতা ফুটে উঠেছে। কারণ শীতের রাতে রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটি সূর্যের একটু উত্তাপ পাওয়ার আশায় প্রহর গোনে। কবি ওই ছেলেটির পাশে দাঁড়িয়ে গভীর মমতায় তার দুঃখ দূর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এতে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার দিকটি গভীর সমবেদনায় প্রকাশিত হয়েছে।
উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণেপ্রার্থী কবিতার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র প্রকাশিত। তিনি দরিদ্র ভিক্ষুককে সহায়তা না করে বরং বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। উঁচুতলার মানুষ নাদিম সাহেব সমাজের অসহায় মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার বদলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। কবির মতো সমাজের অসহায়ের প্রতি মমত্বের বিপরীতে তার কর্মকান্ডে ফুটে উঠেছে বিরক্তি এবং নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা। এভাবেই উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণপ্রার্থী কবিতায় প্রকাশিত সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত ও দীন-দরিদ্র মানুষের প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ.
ড্রাইভার আবদুলের অভিব্যক্তিতেপ্রার্থী কবিতার মূল চেতনা প্রকাশ পেলেও কবি সুকান্তের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। -মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রার্থী কবিতায় কবি এমন সমাজ গড়তে অঙ্গীকারবদ্ধ যেখানে বস্ত্রহীন মানুষের কোনো দুঃখ থাকবে না। অবহেলিত ও বঞ্চিত শিশুদের প্রতি কবির অসীম মমতা, আর এ মমত্ববোধ থেকেই তিনি এমন সমাজ গড়তে চান যাতে শীতার্ত, বস্ত্রহীন মানুষের জীবন থেকে সব দুঃখ চিরতরে ঘুচে যায়। কিন্তু উদ্দীপকে নাদিম সাহেবের ড্রাইভার আবদুল রাস্তার ভিক্ষুকের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও এদের জন্য নতুন সমাজ গড়ার মতো কোনো ভাবনা উঠে আসেনি।
উদ্দীপকের ড্রাইভার আবদুলের প্রচেষ্টার মধ্যেপ্রার্থী কবিতার কবির মতোই অসহায় মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে। ড্রাইভার ভিক্ষুকদের দুর্দশা দেখে ব্যথিত ঠিকই তবে সে এর প্রতিকার প্রত্যাশী নয়। তার অভিব্যক্তিতে দুর্বল মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যায়। তাই তাকে অসহায় ভিক্ষুকটির সাহায্যার্থে নাদিম সাহেবের কাছে কোনো আবেদন করতে দেখা যায়নি।
সুতরাং বলা যায় যে, ড্রাইভার আবদুলের অভিব্যক্তিতেপ্রার্থী কবিতার মূল চেতনা প্রকাশ পেলেও কবি সুকান্তের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি- মন্তব্যটি যথার্থ।
শেষ কথা
আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভালোলেগছে এবং এই পোস্ট থেকে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা mcq ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম শিক্ষামূলক আরও পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকুন। অষ্টম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের অনেক পোস্ট এই ওয়েবসাইটে শেয়ার করা হয়েছে। পোস্ট টি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আরও দেখুনঃ
জাগো তবে অরণ্য কন্যারা- সুফিয়া কামাল। ৮ম শ্রেণি