E-Haq is the founder of BanglaTeach. He is expertise on Education, Health, Financial, Banking,...
২০২২-২৩ সালে এসে মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে প্রতিটি নাগরিকের অবগত থাকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা সম্প্রতি সরকার থেকে দেওয়া উপবৃত্তি টাকা সহ সাধারণত নাগরিকদের সাথে টাকা জালিয়াতির অনেক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংগুলোর সাথে।
বাংলাদেশে থাকা মোবাইল ব্যাংকিং তথা বিকাশ, রকেট, নগদ সহ ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিংগুলো যদিও গ্রাহকদের সুস্থ্য একটি ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাদের কার্যক্রম চালু করে, তবে সম্প্রতি সময়ে টাকা জালিয়াতি, মোবাইল ব্যাংকিং এর গ্রাহকদের একাউন্ট হ্যাক করে টাকা নিয়ে যাওয়া সহ নানা হেনেস্তামূলক ঘটনা ঘটতেছে। এমতোবস্থায় গ্রাহকদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় কি? কি কি পদক্ষেপ নিতে পারে একজন সাধারণ গ্রাহক তাদের মোবাইল ব্যাংকিং সরক্ষায়?
মোবাইল ব্যাংকিং কি? মোবাইল ব্যাংকিং হলো মূলত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে ব্যাংকিং এর আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা। সহজে বললে মোবাইল দ্ধারা আর্থিক লেনদেন করা, টাকা আদান-প্রদান করাকেই মোবাইল ব্যাংকিং বলে। সরাসরি ব্যাংকে না গিয়ে টাকা উত্তোলন, যে কোনো স্থানে টাকা পাঠানো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল পরিশোধ, কোনো কিছুর পেমেন্ট করা সহ ইত্যাদি রকম আর্থিক লেনদেন মোবাইল দ্ধারা করাকেই মোবাইল ব্যাংকিং বলে। আর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ২০১১ সালের ৩১শে মার্চ মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা চালু করে। কিন্তু বর্তমানে বেশ কয়েকটি কোম্পানি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
যাইহোক, এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, কিভাবে একজন ব্যক্তি তাঁর মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষিত রাখতে পারে? মূলত বেশ কয়েকটি উপায় অবলম্বন করে একজন ব্যক্তি তাঁর মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় রাখতে পারে। চলুন জেনে নিই মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয়গুলো।
মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় ৭ করণীয়
আপনি যদি এখানে উল্লেখিত ৭টি করণীয় এর মধ্যে যেকোনো একটি কিংবা একাধিক উপায়গুলো অ্যাপ্লাই করেন, তাহলে আশা করি বর্তমান সময়ে এসে কোনো প্রতারক আপনার মোবাইল ব্যাংকিং হ্যাক করে টাকা নিয়ে যেতে পারবে না। শুধুমাত্র নিম্নোক্ত করণীয়গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ে তা বাস্তব জীবনে সম্পাদন করার চেষ্টা করবেন। মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় ৭টি করণীয় হলো-
পাবলিক ওয়াইফাই কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা
সাধারণত আমরা সাধারণ জনগণ কোথাও গেলে কিংবা সুযোগ পেলেই পাবলিক ওয়াইফাই সহ যত ধরনের ফ্রী ইন্টারনেট রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ি। কিন্তু আধোও আমাদের কোনো ধরণা আছে এর রিস্কি সম্পর্কে? অনেকে এই ব্যাপারে অবগত রয়েছে আবার অনেকে নেই। যাইহোক, বেশিরভাগ হ্যাকারের প্রথমত টার্গেট থাকে এরকম পাবলিক ইন্টারনেট কানেকশনের প্রতি। হ্যাকারগণ প্রথমত পাবলিক ওয়াইফাই কিংবা ইন্টারনেট হ্যাক করে রাখে এবং হ্যাকাররা সুচতুর ভাবে ম্যান এন দা মিডল অ্যাটাক বা মলওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন এর মাধ্যমে আপনার আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রেডেনশিয়াল সকল তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এর মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার অজান্তেই আপনার স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। যা পরবর্তীতে আপনার মোবাইলে থাকা সকল কিছুর পাসওয়ার্ড সহ সকল তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। একইভাবে আপনার স্মার্টফোনে থাকা মোবাইল ব্যাংকিং এরও। তারপর মোবাইল ব্যাংকিং হতে সকল টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে একজন গ্রাহক পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা থেকে যথা-সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
একাউন্টের গোপন পিনকোড শেয়ার না করা
এই সমস্যাটি বেশিরভাগ সময়ই গ্রাম-অঞ্চলে দেখা যায়। অজ্ঞতা বশত অনেক সাধারণত মানুষ তাদের মোবাইল ব্যাংকিং এর পিন কোড/নাম্বার অন্য কারো সাথে নানা কারণে শেয়ার করে থাকে। কিন্তু পরোক্ষণে যখন একাউন্ট চেক দিতে যায়, তখন দেখে একাউন্টে কোনো টাকা নেই। আর উক্ত সমস্যাটি হয় মূলত মোবাইল ব্যাংকিং এর গোপন পিন নাম্বারটি দ্ধিতীয় কারো সাথে শেয়ার করার জন্যই। তাই অবশ্যই দ্ধিতীয় কারো সাথে একাউন্টের গোপন পিনকোড শেয়ার করা হতে বিরত থাকুন। অন্যথায় আপনার একাউন্টের টাকা সম্পূর্ণ উত্তোলন হয়ে যাবে আপনার অজান্তেই।
অজানা নাম্বার হতে ফোন আসা
সম্প্রতি যে কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং এর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, তাঁর সবগুলোই মূলত এভাবেই ঘটেছে। অর্থাৎ প্রথমে অজানা একটি নাম্বার হতে ফোন আসবে এবং আপনার সাথে কথা বলবে। আপনাকে বোঝাবে মোবাইল ব্যাংকিং এর অফিস হতে ফোন দিয়েছে কিংবা অনেক ক্ষেত্রে কাস্টমার কেয়ারের পরিচয় দিবে। এবং পরোক্ষণে আপনার নিকট হতে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং এর পিন নাম্বার চাইবে। আর যখনই আপনি তাদেরকে আপনার পিন নাম্বার প্রোভাইড করবেন, সাথে সাথেই আপনার একাউন্ট হতে টাকা চলে যাবে। তাই এরকম অজানা নাম্বার হতে ফোন আসলে তা রিসিভ করা হতে বিরত থাকুন।
থার্ড-পার্টি সাইট হতে ডাইনলোড করা থেকে বিরত থাকা
আমাদের মাঝে বর্তমানে প্রায় সবাই এখন ইন্টারনেট ব্রাউজ করে থাকি আর সেখানেই অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটি থাকে। যেমন ধরুন কেউ একজন ইন্টারনেটে এডাল্ট সহ নানা রকম থার্ড পার্টি সাইট ভিজিট করলো, আর এতে করে ভুল করে সে একটি ফাইল ডাইনলোড করে ফেললো। সে নিজেও জানলো না যে সে কি ধরনের ফাইল ডাউনলোড করলো এবং সেই ফাইলটি আর খুঁজেও ফেলো না। এমতোবস্থায় তাঁর মোবাইল ফোনটি ম্যালওয়ার দ্ধারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ হয়ে থাকে। ফলাফল সরূপ, তাঁর মোবাইলে থাকা সকল ধরনের তথ্য হ্যাকারের নিকট পাঠিয়ে দিবে। এতে করে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং এর টাকা নিয়ে যাবে। মূলত মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে এই স্টেপটি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই চেষ্টা করবেন কোনো রকম আন-অথোরাইজ সাইট থেকে যেকোনো ফাইল, ছবি, মুভি ইত্যাদি ডাইনলোড করা থেকে বিরত থাকতে।
ফোনের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখা
আমাদের মাঝে অধিকাংশের একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, ফোন আপডেট দিলে মোবাইল স্লো হয়ে যায়, বস্তুত ফোনের আপডেটের মাধ্যমে নতুন অপারেটিং সিস্টেম যুক্ত হয়। আর প্রতিটি নতুন অপারেটিং সিস্টেমে নতুন নতুন ফিচার সহ সিকিউরিটি যুক্ত হয়। এতে করে ম্যালওয়ার খুব সহজে আপনার মোবাইলে আক্রমণ করতে পারবে না। সুতরাং যথাসম্ভব চেষ্টা করুণ নিয়মিত আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেমটিকে আপডেট করে রাখার। যা আপনার মোবাইল ব্যাংকিং সরক্ষায় কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে।
মোবাইল ফোন সাথে রাখা
আমাদের মাঝে অনেকে এই ভুলটি করে থাকে যে, মোবাইল ফোনকে নিজের ঘরে কিংবা অফিসের ডেস্কে অথবা অন্য কারো নিকট দিয়ে আমরা কাজ করি। মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় এই কাজটি করা একদম উচিত নয়। এই ক্ষেত্রে আপনাকে নিজের হ্যান্ডসেটটি নিজের সাথেই রাখতে হবে। অন্যথায় কেউ আপনার মোবাইল এর কুকিজ ব্যবহার করে মোবাইলে থাকা সমস্ত কিছুর পাসওয়ার্ড সহ মোবাইল ব্যাংকিং এর পাসওয়ার্ড তথা পিনকোডটি চুরি করতে পারে। তাই অপরিচিত তো বটেই, বরং পরিচিত কারো নিকটও মোবাইল ফোন দিয়ে নির্ভয়ে থাকা উচিত নয়্য। মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে এই স্টেপটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সাবধানে লেনদেন করুণ
যখনই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে আপনি দৈনন্দিন জীবনের লেনদেন করবেন, তখন আপনি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন। কেননা কেউ যদি তখন আপনার মোবাইল ব্যাংকিং এর পাসওয়ার্ড জেনে যায়, তাহলে মূহর্তেই আপনার মোবাইল ব্যাংকিং এর একাউন্ট থেকে সম্পূর্ণ টাকা হাওয়া হয়ে যেতে পারে। তাই যখন বাহিরে গিয়ে টাকা উঠাবেন কিংবা লেনদেন করবেন, তখন আপনি পাসওয়ার্ড কিংবা পিনকোড বসানোর সময় চারপাশ দেখে পিনকোড বসাবেন। অবশ্যই যদি দোকানে থাকেন, তাহলে দেখে নিবেন যে, দোকানে কোনো সিসি ক্যামেরা রয়েছে কি-না। যদি থাকে, তাহলে আপনাকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর এভাবেই আপনি মোবাইল ব্যাংকিং সরক্ষায় করণীয়গুলো মান্য করার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় নিয়ে শেষ কথা
মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে আজকের আর্টিকেলে বেশ কয়েকটি উপায় আমরা তুলে ধরেছি। যার মধ্যে যদি আপনি সবগুলো মান্য করতে পারেন, তাহলে আশা করি হ্যাকার কিংবা কোনো ধরনের স্প্যামার দ্ধারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। তবে অবশ্যই মোবাইল ব্যাংকিং এর পাসওয়ার্ড অন্যকে দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এবং যখনই বাহিরে টাকা উত্তোলন করতে যাবেন, তখন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
মূলত এখানে যে ৭টি উপায় তুলে ধরেছি, মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে এগুলোই যথেষ্ট। তাই যদি আপনি এখন অবধি পুরো আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন, তাহলে আশা করি মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষা নিয়ে আপনি এখন যথেষ্ট সতর্ক। আর যদি বোঝতে না পারে কিভাবে সরক্ষায় থাকবেন, তাহলে দয়া করে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পুনরায় পড়ুন এবং জানুন মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় সমূহ। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি দ্ধারা পাঠকগণ উপকৃত হতে পেরেছে।
মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয় নিয়ে আরো জানতে
E-Haq is the founder of BanglaTeach. He is expertise on Education, Health, Financial, Banking, Religious and so on.