আমার পরিচয় কবিতা – সৈয়দ শামসুল হক। বাংলা ১ম পত্র

আমার পরিচয় কবিতা
ekram145
UX/UI Designer at - Adobe

Sharing is caring!

এই পোস্টে আমার পরিচয় কবিতা টি দেওয়া হয়েছে। এটি একটি জনপ্রিয়য় কবিতা। সৈয়দ শামসুল হকের ‘কিশোর কবিতা সমগ্র’ থেকে ‘আমার পরিচয়’ শীর্ষক কবিতাটি সম্পাদিত আকারে চয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ। আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার পশ্চাতে আছে সমৃদ্ধ এক ইতিহাস। সৈয়দ শামসুল হক গভীর মমত্বের সঙ্গে কবিতার আঙ্গিকে চিত্রিত করেছেন সমৃদ্ধ সেই ইতিহাস,

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পটভূমি। সহজিয়া পন্থী বৌদ্ধ কবিদের সৃষ্ট চর্যাপদের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তার যে অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধের পরিচয় মুদ্রিত হয়ে আছে – যুগে যুগে নানা আন্দোলন, বিপ্লব-বিদ্রোহ, আর মতাদর্শের বিকাশ হতে হতে আমরা এসে পৌঁছেছি আজকের বাংলায়। নিচে থেকে আমার পরিচয় কবিতার ব্যাখ্যা, মূলভাব ও কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করুন।

আমার পরিচয় কবিতা

এই অংশে কবিতা টি শেয়ার করা হয়েছে। এই কবিতা লিখেছেন সৈয়দ শামসুল হক। এটি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা গদ্য অংশের একটি কবিতা। যারা কবিতা টি পড়ার জন্য খুজতেছিলেন এখান থেকে পড়ে নিবেন অথবা পিডিএফ সংগ্রহ করে নিবেন।

আমার পরিচয়
– সৈয়দ শামসুল হক

আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ?

আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে, আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।
আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে, আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।

এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে, এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে।
এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে, এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।

আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে, আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’ ‘মহুয়ার পালা’ থেকে।
আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে, আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।

এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে, এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে, এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।

আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে, আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে, শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে ?

তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।

পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হ’লো ইতিহাস।

এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।

আমার পরিচয় কবিতার মূলভাব

এই কবিতা টি একটি বিশেষ দিককে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে/। অনেকে কবিতা টির প্রধান বিষয় জানেন না। তাই এই অংশে আমার পরিচয় কবিতার মূলভাব শেয়ার করেছি। যারা মূলভাব পড়তে চান, এখান থেকে পড়ুন।

‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি সৈয়দ শামসুল হক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও আত্মমর্যাদাবোেধসম্পন্ন জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পটভূমি তুলে ধরেছেন। কবিতায় কবি আত্মপরিচয় নির্দেশ করতে গিয়ে বাঙালির বহু পুরনাে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস আমাদের সামনে এনেছেন। এতে তাঁর আত্মমর্যাদাবােধ জাগ্রত হয়েছে। হঠাৎ করে পাওয়া বা রাতারাতি গড়ে ওঠা কোনাে বিষয় কবির এই আত্মপরিচয়ের পেছনে কাজ করেনি।

তার আত্মপরিচয় এদেশের ঋদ্ধ, সমৃদ্ধ সংগ্রামী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ঘেরা একটি সমৃদ্ধ পরিচয়। তাঁর আত্মপরিচয়ের সঙ্গে চর্যাপদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য যাত্রা, পালযুগের চিত্রকলা, বৌদ্ধবিহারের জ্ঞানচর্চা, মুসলিম ধর্ম ও সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ, জমিদারি প্রথা, মৈমনসিংহ গীতিকার জীবন, কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে শুরু করে তিতুমীর, হাজী শরিয়তুল্লাহ, সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম প্রমুখের বিপ্লব-বিদ্রোহ একাকার হয়ে আছে।

রবীন্দ্রনাথের বিশাল সৃষ্টি, নজরুলের সমস্ত বিদ্রোহী চেতনা ও সাম্যবাদের মুক্তির চেষ্টার সঙ্গেও একাত্ম হয়ে আছে কবির আত্মপরিচয়। তিনি বাঙালির ভাষা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যােগ্য নেতৃত্বে মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জনের সঙ্গে আত্মপরিচয়টি জুড়ে দিয়েছেন। আমার পরিচয়’ কবিতায় মূলত ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলাদেশের অনবদ্য রূপটি প্রকাশ পেয়েছে।

আমার পরিচয় কবিতার ব্যাখ্যা

সবাই কবিতা পরেছি। কিন্তু এর ব্যাখ্যা কি? বা কবিতাটি দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে তা জানতে পারিনি। এজন্য এখানে সম্পূর্ণ কবিতা বিশ্লেষণ করে দেওয়া হয়েছে। নিচে থেকে আমার পরিচয় কবিতার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ জেনেনিন।

কবি বাংলায় জন্মেছেন। বাংলায় কথা বলে তিনি ভাব বিনিময় করেন। তিনি বাংলার আলপথ দিয়ে হাজার বছরের পথ পার হয়ে এসেছেন।

প্রাচীনকাল থেকে বড় বড় বাণিজ্যতরিতে করে ব্যবসায়বাণিজ্য করতেন সওদাগরেরা। এখানে মালকাব্যে বর্ণিত চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙা মধুকরের কথা স্মরণ করা হয়েছে।

বাঙালি জাতির বিদ্রোহের ঐতিহ্য বােঝাতে কৈবর্ত বিদ্রোহের কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিদ্রোহের নেতা ছিলেন কৈবর্ত সম্প্রদায়ের বীর দিব্য বা দিব্বোক । আনুমানিক ১০৭০-১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দে মহীপালের বিরুদ্ধে এ বিদ্রোহ করেন অনন্তসামন্ত চক্রের মিলিত শক্তি। ইতিহাসে এটি কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে খ্যাত।

কবি এদেশের শিল্পসমৃদ্ধ ঐতিহ্য বােঝাতে পালযুগের চিত্রকলার উল্লেখ করেছেন। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে গােপালের রাজ্য শাসনের মধ্য দিয়ে বঙ্গে পালযুগের সূচনা হয়। পালদের রাজত্ব চারশত বছর টিকে ছিল। এ সময় শিল্প-সাহিত্যের অসামান্য বিকাশ সাধিত হয়।

কবি বাংলার মুসলিম ঐতিহ্যের সুমহান নিদর্শনের পরিচয় দিতে গিয়ে সােনামসজিদের কথা বলেছেন। অসাধারণ শিল্প সৌন্দর্যমণ্ডিত এই স্থাপত্যকর্ম হােসেন শাহের রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) নির্মিত হয়। এটি চাপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্রভূমে অবস্থিত ছােট সােনামসজিদ। একই সঙ্গে কবি আউল-বাউল, মাটির দেউলের কথাও বাঙালির ঐতিহ্য হিসেবে স্মরণ করেছেন।

বাংলার স্বাধীনতা ঘােষণাকারী বারাে ভূঁইয়াদের কথা কবি বিশেষ ঐতিহ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাংলায় পাঠান করানী বংশের রাজত্ব দুর্বল হয়ে পড়লে স্বাধীন জমিদারদের উত্থান ঘটে। ১৫৭৫ সালে মােগল সম্রাট বাংলা জয় করার পর এই জমিদাররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ করেন। এঁরাই ইতিহাসে বারাে ভূঁইয়া নামে পরিচিত। লােককাহিনির প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে কবি ‘কমলার দীঘি’ ও মহুয়ার পালা’র কথা উল্লেখ করেছেন। এ দুটিই মৈমনসিংহ গীতিকার বিখ্যাত পালা।

আমার পরিচয় কবিতার ব্যাখ্যা

অত্যাচারী ইংরেজদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন সংগ্রামকারী বাঙালি বীর হিসেবে তিতুমীরের কথা স্মরণ করেছেন কবি। চব্বিশ পরগনার হায়দরপুর গ্রামে ১৭৮২ সালে মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে শহিদ হন। হাজী শরীয়তউল্লাহ বিদেশি শাসন-শােষণ, জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচার থেকে মানুষকে মুক্ত করার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি (১৭৮১-১৮৪০ খ্রি.) মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার সামাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ধর্মকে আশ্রয় করে সব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সােচ্চার হন।

নােবল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি’ ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিবীণা’ বাংলা সাহিত্যের অবিস্মরণীয় কীর্তি। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে ও স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁদের গান ও কবিতা ছিল আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।

ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের সশস্ত্র যোদ্ধা মাস্টার দা সূর্য সেন আর ক্ষুদিরামকে কবি বাঙালি ঐতিহ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ক্ষুদিরাম বসু (১৮৮৯-১৯০৮ খ্রি.) মেদিনীপুর জেলার মৌবনি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ফাসিতে ঝুলিয়ে এই মহান বিপ্লবীকে হত্যা করা হয়। মাস্টার দা সূর্য সেন (১৮৯৩-১৯৩৪ খ্রি.) চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার নােয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজদের অস্ত্রাগার লুট করে তিনি তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং চট্টগ্রামের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। তাকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।

বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিপুল শিল্পকর্মের পটভূমিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কবি স্মরণ করেছে। জয়নুল আবেদিন (১৯১৪- ১৯৭৬ খ্রি.) কিশােরগঞ্জের কেন্দুয়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন। চিত্রশিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক অবনঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১ খ্রি.) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে কবি বাঙালির ঐতিহ্য হিসেবে স্মরণ করেছেন। কারণ বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চেতনার পথ ধরেই সূচিত হয় স্বাধীনতা আন্দোলন।

বাংলা ও বাঙালির অবিসংবাদী নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিস্ময়কর প্রতিভাদীপ্ত নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ অতিক্রম করেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বাঙালির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের অবিস্মরণীয় ভাষণ বাঙালির প্রেরণার উৎস।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট থেকে অবাক সূর্যোদয় কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকবেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়।  আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

অবাক সূর্যোদয় – হাসান হাফিজুর রহমান। পিডিএফ

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা MCQ প্রশ্ন উত্তর- পিডিএফ

PDF তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *